কলকাতা- ২
চেন্নাই-১
বুধবার রাতে কলকাতার স্টেডিয়াম জুড়ে ছিল উত্তেজনা। পরতে পরতে চমক। দর্শকদের মধ্যেও অনুভব করা যাচ্ছিল টানটান উত্তেজনা। গোটা স্টেডিয়ামে যখন কলকাতা কলকাতা রবে মত্ত তখন মাঠের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফুটবলারাও বোধহয় চাইছিলেন দর্শকদের সেই ভালবাসার উপহার দিতে। যখন একদিকে নিজের ঘরের মাঠে কলকাতা চাইছে লীগ তালিকার উপরে উঠতে তখন আরেকদিকে চেন্নাই চাইছে ঘুরে দাড়াতে। কিন্তু ভালবাসা আর পরিশ্রম এর ফল একেই বলে। ২-১ জিতে কলকাতা জয় উপহার দিল কলকাতার দর্শকদের।
খেলার শুরুতে গোল করেন রাফায়েল অগাস্ত। যেভাবে হঠাৎ গোল আসে তা চেন্নাইকে এগিয়ে দেয়। এই গোলের ক্ষেত্রে কিছুটা দায়ী কলকাতার রক্ষনভাগ। রক্ষনের বড় ভুল চেন্নাইকে এগিয়ে দেয়। ম্যাচের প্রথমার্ধে খেলা সম্পূর্ণ ভাবে ছিল চেন্নাই এর হাতে। রাফায়েল গোল করা ছাড়াও আজ দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সারা মাঠ জুড়ে খেলতে দেখা গেছে তাকে। বলতেই হয় ধনচন্দ্র এর কথা। বেশ কয়েকবার গোল করার চেষ্টা করেছেন আজ। এলানো কয়েকবার চেষ্টা করলেও গোল করতে পারেনি। ফ্রি কিক থেকে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে যেতে হয় তাকে। ফিকরুকে আজ বেশকিছু ভুল করেছেন। যার দাম দিতে হয়েছে দলকেই। করনজিত এই দুটি গোল সেভ করতে না পারলেও বেশ কিছু দুরন্ত শট আটকেছেন তিনি। প্রথমদিকে চেন্নাই এর দল বেশ সঙ্গবদ্ধ লেগেছে। রক্ষনভাগ যেভাবে সাজানো ছিল যেখান থেকে কলকাতা কোনরকম আক্রমন তৈরি করতে পারছিলনা। তবে খেলা এগোতেই ছন্দ হারিয়ে ফেলে চেন্নাই। একের পর এক চোট, হলুদ কার্ড দল এর গতি কিছুটা মন্থর করে।
কলকাতা দারুন ভাবে জ্বলে উঠল দ্বিতীয়ার্ধে। কোচের কথা “আজকের ম্যাচ নিয়েই ভাবছি, পরের ম্যাচ আজকের পর ভাববো”। এই প্ল্যান কাজে লাগল দলের। পস্তিগা দলে যোগ দিলেও মাঠে না নামানো নিয়ে যে প্রশ্ন ওঠে তার উত্তর পেয়ে গেল সবাই। হাবাস ভরসা রেখেছিলেন দলের অন্য সদস্য দের উপর। সেই ভরসার মান রাখল সবাই। যখন অগাস্তর গোলে এগিয়ে যায় চেন্নাই প্রায় ধরেই নেওয়া হয়েছিল প্রথমার্ধে গোল পাবে না কলকাতা তখনই সামিকের গোলে ম্যাচে ফিরে আসে কলকাতা। এই গোলের কথা বললেই সামিক এর সঙ্গে নাম আসবে বোরহার। অসাধারণ পাস আর গোল ম্যাচে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখে হাবাসের ছেলেরা। যে গোল অনেক দিন মনে থাকবে তা আসে ৬২ মিনিটের মাথায় হিউম এর পা থেকে। তবে এই গোল যতটা হিউমের ততটাই সামিক দুতির। প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ থেকে বল নিয়ে এসে সুযোগ দিলেন হিউমকে আসার। বেশকিছুক্ষণ বল প্রতিপক্ষের পা থেকে বাঁচিয়ে দেখে নিলেন হিউমকে। সময় বুঝে পাস আর কোনরকম ভুল না করে হিউম সেই বল জালে জড়ালেন। অসামান্য এই কম্বিনেশন নিশ্চয় মনে থাকবে সকলের। তবে মাঠে আজ আরাতাকে আগের দিনের মত লাগেনি।
আজ খেলার মধ্যেও ছিল উত্তাপ। সময় এগোতেই সেই রেষ ছড়িয়ে পরে ফুটবলারদের উপর। একের পর এক হলুদ কার্ড দেখেন পতেনযা, ধনচন্দ্র, ফিকরু, রাফায়েল, পেলিসারি ভালদো। খেলার শেষের দিকে পেলিসারির কর্নার ঘিরে ছিল উত্তেজনা। হিউম, গ্যাভিলন, ভালদো সকলে মিলে উঠে আসে গোলপোস্টে। একইসঙ্গে আঘাত পায় ৩জন। এর থেকে বোঝা যায় কতটা টান খেলার প্রতি। আজকের হিরো অব দি ম্যাচ সামিগ দুতি। বলতেই সিধান্ত একদম সঠিক যেভাবে নিজের গোল, অ্যাসিস্ট করেছেন তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। এই ম্যাচের পর কলকাতা উঠে এল তালিকার ২ এ। চেন্নাই রইল তালিকার শেষে। আজকের ম্যাচের পর কলকাতা নিশ্চয়ই কিছুটা স্বস্তিতে। আর দর্শকদের উপহার দিলেন এক সুন্দর সন্ধ্যা।
Be the first to comment